পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুরু থেকেই পদ্মা সেতুকে বলা হয় বাংলাদেশের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প। কোনোরকম বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশের জন্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত করা ছিল প্রায় অসম্ভবনীয়। এ সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক এবং রেল সেতু। মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা এর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটেছে। এবং পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলা ঢাকার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে এর ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে নির্মিত ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্পান এবং ৪২ টি পিলারে নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে ৭২ ফুটের চার লেনের একটি মহাসড়ক যা সেতুর উপরের স্তরে এবং নীচের স্তরে একটি সিঙ্গেল ট্র্যাক রেলপথ রয়েছে। চীন রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে এর নির্মাণ যাত্রা শুরু হয়। পুরো নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং এই সেতুটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 2022 সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করেন। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া থেকে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পর্যন্ত সংযোগকারী এই সেতুটির দুটি স্তর রয়েছে। পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় হয়েছে ৩.৮৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটির বাজেট আমাদের জন্য কঠিন কারণ ছিল তহবিল একটি বড় বিবেচনা এবং বিশ্বব্যাংক যখন তার ঋণ চুক্তি বাতিল করে তখন এটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করে। অন্যদিকে, এটি কেবল অর্থনৈতিক সমস্যাই নয়, পরিবেশগত সমস্যাও ছিল। কারণ পদ্মা নদীর দুটি প্রকৃতি রয়েছে: শীতকালে এটি শান্ত দেখায় এবং গ্রীষ্মে এর চরিত্র নিষ্ঠুর। তাই বিদেশী সাহায্য ছাড়া এবং পদ্মার প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় নির্মাণ প্রক্রিয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। আর তাই শুরুতেই নির্মাণ প্রক্রিয়াকে ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রথম অংশটি ছিল মূল সেতু নির্মাণ এবং দ্বিতীয় অংশটি ছিল প্রায় ১৪ কিলোমিটার (জাঞ্জিরায় ১.৬ মাওয়া + ১২.৪) নদী প্রশিক্ষণের কাজ। তৃতীয় ও চতুর্থ অংশ দুটি মহাসড়কের সঙ্গে মূল সেতুর সংযোগ স্থাপন করছিল। চূড়ান্ত অংশ ছিল সেবা এলাকা নির্মাণ এবং তত্ত্বাবধান।সেতুটিতে মোট ৪২ টি স্প্যান রয়েছে, প্রতিটি ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩১৪০ টন ওজন বহন করতে সক্ষম। এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে ১৫০ মিটার লম্বা মোট ২৬৪টি পাইল রয়েছে এবং প্রতিটি পাইলের ১৫০ মিটার করে ১২০ মিটার পানির নিচে থাকবে। সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এটি ২১ টি দক্ষিণ জেলায় বসবাসকারী প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রগতিশীল পরিবর্তন আনবে। এর ফলে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। এছাড়া এটি আমাদের শিল্প উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। চিকিৎসা ও শিক্ষা সুবিধা সহজলভ্য হবে। ফলে এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গর্বিত বাংলাদেশের আরও একটি ইতিহাসের সাক্ষী হবে বিশ্ব।
See more about same topic:
Paragraph : Padma Bridge
সাধারণ জ্ঞান : পদ্মা সেতু সম্পর্কিত