রচনা : পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব


“Bangladesh’s largest river bridge is expected to bolster the country’s economy through a landmark connection between capital Dhaka and the country’s southern region.”

-Financial Express

বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বর্তমানে সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জন গুরুত্ব বিবেচনায় এই প্রকল্পগুলোকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সরকার। এগুলোর মধ্যে পদ্মাসেতু অন্যতম।

এক নজরে পদ্মা সেতু

[table id=8 /]

অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে সেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে আসবে। দেশের বাকি অংশের সাথে সড়ক যোগাযোগ এই সেতু নিশ্চয়তা দেবে, ফলে যাতায়াতের সময় ও ব্যয় উভয়ই হ্রাসপাবে। নির্মিত হওয়ার ৩১ বছরের মধ্যে জিডিপি ৬০০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৩২ সালের পর বাৎসরিক রিটার্ন ৩০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

শিল্পায়ন:

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শিল্পায়নের প্রাণ বলা হয়। কেননা কাঁচা মালের সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়োজন উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের শিল্প উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যথাযথ গ্যাস সরবরাহ পেলে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চল দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন:

কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের অর্থ দেশের উন্নয়ন। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে শাকসবজি চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ১০২ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি:

শিল্পায়ন, ব্যবসা খাতের পরিবহণ ও বাণিজ্য বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে পদ্মা সেতু। এতে করে ব্যাপক নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। প্রায় ২ কোটির অধিক বেকারের কর্মসংস্থান ঘটবে আশা করা হচ্ছে।

দারিদ্র্য হ্রাস:

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা জনসংখ্যা জাতীয় গড়ের তুলনায় ৫% বেশি। এই অঞ্চলটি দেশের অবশিষ্টাংশ থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘাটতি। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য কমবে ১.৯% এবং স্থানীয় পর্যায়ে ২% দারিদ্র্য কমবে। এর ফলে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে।

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলে অর্থনৈতিক সাশ্রয় :

সার্বিক প্রভাব

দেশের জিডিপির হার বাড়াবে ১.২৩%

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে জিডিপি বাড়াবে ২.৩%

দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়াবে ০.৮৪%

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলে ৩১ বছরে সাশ্রয় হবে ১,২৯, ৫৮৪ কোটি টাকা।

দৈনিক সেতু দিয়ে যত যানবাহন চলাচল করবেঃ
২০২৩ সালে = ২৫, ১৫৬ টি
২০৩০ সালে = ৩৬, ৭৮৫ টি
২০৩৫ সালে = ৪৪, ২৯৬ টি
২০৫০ সালে = ৬৬, ৮২৯ টি (এক নজরে চিত্রে দেখুন)।

রচনা : পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব | The Padma Bridge গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুচ্ছেদ (নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও যেকোনো হায়ার স্টাডিসের লিখিত এবং প্রতিযোগীতার জন্যে রচিত।

 

পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়ার সময় ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এডিবি, জাইকা ও সেতু বিভাগের কয়েকটি সমীক্ষায় পদ্মা সেতুর বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি উঠে আসে।

পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনা/যশোর যেতে সময় :

পদ্মা সেতু দিয়ে
৩.৪০ ঘণ্টা (১৭০ কিমি)
৩.২০ ঘণ্টা (১৬০ কিমি)

মাওয়া ফেরি পথ
১২.৪৫ ঘণ্টা (১৭০ কিমি)
১২.৫৫ ঘণ্টা (১৬০ কিমি)

পাটুরিয়া ফেরি পথ
৭.৫০ ঘণ্টা (২৪০ কিমি)
৭ ঘণ্টা (২১০ কিমি) (এক নজরে চিত্রে দেখুন)।

রচনা : পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব | The Padma Bridge গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুচ্ছেদ (নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও যেকোনো হায়ার স্টাডিসের লিখিত এবং প্রতিযোগীতার জন্যে রচিত।

 

সূত্র: এডিবি, জাইকা ও সেতু বিভাগের জন্য সানেমের সমীক্ষা

সরকারি ব্যয় হ্রাস:

৫০% ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা ফেরি সার্ভিস চালু রাখা বন্ধ হবে এবং আদায়কৃত টোল সম্পূর্ণরূপে সরকার পাবে। ফলে প্রতিবছর সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ডলার।

নদী ভাঙ্গন রোধ:

পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য যে নদী শাসন হবে তার ফলে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৯ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙ্গন থেকে রেহাই পাবে। পাশাপাশি বন্যার কবল থেকেও রক্ষা পাবে কয়েক লক্ষ মানুষ।

অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন:

পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এই অঞ্চলের জনগণের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাজধানী ঢাকায় আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ ব্যবস্থাকে আরও বিকশিত করার মাধ্যমে মানব সম্পদকে আরও শক্তিশালী করবে।

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন:

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ শক্তিশালী হবে বা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। ফলে ঐ অঞ্চলের কৃষি, যোগাযোগ, শিল্পায়ন, নগরায়ন, জীবনমান বৃদ্ধি পাবে যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:

পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজ হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাংলাদেশ ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফলে প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার হবে।

সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, পদ্মাসেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এক বিশাল আশির্বাদ। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি এই পদ্মাসেতু নির্মাণ।


আরো দেখুন

রচনা: সামাজিক জীবনে করোনা ভাইরাসের প্রভাব
রচনা : ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০
 সাধারণ জ্ঞান : পদ্মা সেতু সম্পর্কিত 
Paragraph : The Padma Bridge
অনুচ্ছেদ : পদ্মা সেতু

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top