মাতৃহীন বেদনা আখিরাত ইসলাম রিমা আবেগ ঘনঘটায়, বসে আমি এক কবিতা লিখিতে বসিলাম। কবিতা লিখিতেছি আর আমি ভাবিতে ছিলাম, যাকে আকরাইয়া ধরিয়া আমি বাঁচিয়া আছি সে কি আমার চিরদিন হইতে পারিবে? নাকি…
মাতৃহীন বেদনা
মাতৃহীন বেদনা
আখিরাত ইসলাম রিমা
আবেগ ঘনঘটায়, বসে আমি এক কবিতা লিখিতে বসিলাম। কবিতা লিখিতেছি আর আমি ভাবিতে ছিলাম, যাকে আকরাইয়া
ধরিয়া আমি বাঁচিয়া আছি সে কি আমার চিরদিন হইতে পারিবে? নাকি অন্য কেহ
আসিয়া নিয়া চলিয়া যাইবে। আমি এক মনে চক্ষু বুঝিয়া বসিয়া আছি আর মনকে
প্রশান্তি দিতে লাগিতেছি। আমি ভাবিতেছি এই সুন্দর ধারায় যেমন পাখিরা কতো মিষ্টি
সুরে গাহিতে পারে। আমি কেনো পারিতেছিনা সেই সুর অন্তরে গাতিয়া লইতে। না কি
জীবন লইয়া আমার ভূগিতে হইবে। পরক্ষনেই আমি জানালা দিয়ে বাইরে
তাকাইতেই আমি দেখিতে পাইলাম বরই গাছে তিনটি পাখি খেলায় মাতিয়া গিয়াছে।
আমি দেখিতে দেখিতে আমার মনে পড়িয়া গেল না, তাঁহারা খেলিতেছে না , তাঁহারা
তো বিবেধ সৃষ্টি করিতেছে। আমি খানিক্ষণ মন দিয়া দেখিতেছি, আর আমি যাহা
দেখিতে পাইলাম তাহাতে আমি বুঝিয়া গেছিলাম। কিন্তু সমাজের কিছু মানুষ
তাহাতো বুঝিতে পারিবেনা।আমি দেখিলাম প্রথম পাখিটি দ্বিতীয় পাখিটিকে আঘাত
করিতেছে। কিন্তু দ্বিতীয় পাখিটি তবুও তাঁহার কাছে ফিরিয়া ফিরিয়া যাইতেছে। আমি
অবাক হলাম তৃতীয় পাখিটিকে দেখিয়া। দেখিতেছি দ্বিতীয় পাখিটিকে সে রক্ষা
করিতেছে। তাঁহার যত আঘাত সেই তৃতীয় পাখিটি সহিয়া যাইতেছে। কিন্তু দ্বিতীয়
পাখিটি তো তাহা দেখিতেছেই না। আর দেখিবেইবা কেমন করে, সে তো প্রথমার
জন্য পাগল হইয়া আছে। আমি তাহাতে বুঝতে পারিলাম তৃতীয় পাখিটির মন বেদনা।
কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু মানুষ তাহাতো বুঝিতে পারিবেনা। সে কথা আর
নাহি বা বলিলাম, আমার চক্ষুদ্বয় তাহা দেখিয়া অঝোরে কাঁদিতে লাগিল। আমি
বুঝিতে পারিলাম আমার হৃদয় খানি ভাঙ্গিয়া ছোট ছোট অনু পরমানু হইয়া গিয়াছে। যাই
হোক আমি আবারও মন খানি দিতে লাগিলাম আমার কবিতা খানির উপর।কবিতা লিখিতেছি এমন সময় হঠাৎ বাহিরে দুয়ারের
দিকে তাকিয়ে আমি অকস্মাৎ বিষ্ময় হইয়া গেইলাম, সত্যিই আমি বুঝিতে পারিলাম
না, ইহা কি হইতাছে। আমি দেখিতে লাগিলাম, একটি মুরগি তাহার আটখানা
ছানা নিয়ে পাগলের মত খাবার খুঁজিতেছে। অমনি জননী একখানা খাবার পাইয়া ছানা
গুলোর মাঝে ঝারিয়া দিতেছে।আর ছানা গুলো মনে আনন্দে তাহা খাইয়া লইতাছ আর তাহাদের জননীকে দেখিয়া আমি
বুঝিতে পারিলাম, মায়ের ভালোবাসার চাইতে কিছু হইতেই পারিবেনা। কিন্তু এই সমাজে
তাহাতো কেউ বুঝিতে পারিবেনা। আমার মনখানি পাগল হইয়া গেলো আমার জননীর
জন্য। তাই কবিতা খানি থুইয়া আমি ছুটিতে লাগিলাম আমার জননীর কাছে। পরক্ষণে
আমি এমন কিছু দেখিয়া থমকাইয়া দাঁড়াই পরিলাম।আমি দেখিতে লাগিলাম আমার
সামনে একটি বিড়াল ছানা দাঁড়িয়ে আছে। তাহাকে দেখিয়া আমার মন খানি কেমন
করিতে লাগিল। মনে হইল বিড়াল ছানাটি তার জননীকে হারিয়া ফেলিয়াছে। সে মিও
মিও করে আমার সামনে কাঁদিতেছে। আমি তাহা দেখিয়া বুঝিয়া লইলাম এই সমাজ
তাহাকে মাতৃহীন করিতে বাধ্য করিয়াছে।সেই কারণে তাহার কষ্ট হইতছে। তক্ষুনি আমি
তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া আদর করিতে লাগিলাম। কিন্তু তাহাতে তাহার হৃদয় খানি
ভরিলো না। আমি তাহার চোখ দু’খানি দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম, নিষ্পাপ জন্তুটি
তাহার জননীর আদর ফিরিয়া পাইতে চায়।তাঁহার মন ও বাসনা আমি ভাঙ্গিয়া দিতে
পারিবো না। তাই ছানাটিকে কোলে লইয়া বেড়িয়ে পড়িলাম বাড়ির বাইরে। রাস্তায়
উঠিয়া দেখিলাম একখানি বড় বিড়াল রাস্তার পথে বসিয়া ঘুমাইতেছে। মনে মনে ভাবিলাম আমি বুঝি পাইয়া গেইলাম ছানাটির
জননীকে । কিন্তু না বিড়ালটি দেখিয়া ছানাটি আমার বুকের লুকাইতেছে। এদিকে বিড়ালটি আমাকে দেখিয়া ওখান থেকে
পালাই গেল। তাতে আমি বুঝিলাম ইহা তাহার জননী হইতেই পারিবে না । তাই
ছানাটি লইয়া এগুতেই আমি যা দেখিলাম তাহাতে অবাক না হইয়া পারিলাম না।
দেখিলাম সাদা কালো একটি বিড়াল আমার দিকে দৌড়াই আসিতেছে। এদিকে ছানাটি
দেখিলাম নামিবার জন্য ছটফট করিতেছে আমি বুঝিতে পারিলাম ইহাই তাহার আসল জননী হইবে। তাই ছানাটিকে নিচে নামাই
দিলাম। সে তাহার জননীর কাছে যাইতে অমনি তাহার জননী তাহার মুখ চাটিতে
লাগিল। ইহা মায়ের ভালোবাসা ছাড়া কিছুই হইতেই পারিবেনা। আমি তাদের মিলনখন
শেষ করিয়া বাড়ির দিকে আসিতেছি এমন সময় আমার জননীর কথা মনে পড়িয়া
গেইল। তাই আমি আমার জননীর কাছে আসিবার জন্য ছুটিতে লাগিলাম। আমার
জননীকে পাইয়া আলিঙ্গন করিতে করিতে বলিতে লাগিলাম, এই সমাজ কেনো বুঝিতে পারে না জননী সর্ব শ্রেষ্ঠ হইবে।