রচনা : মেগা প্রজেক্ট

মেগা প্রজেক্ট / ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট


উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপ্রসূত ও স্বপ্নে লালিত বাংলাদেশ, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সুযোগ্য তৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অনন্য গতিতে ধাবমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার পর্যায়ক্রমে রূপকল্প ২০২১ (২০৪১ এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এ উন্নয়ন যাত্রার সরকার মেগা প্রকল্পসমূহ পর্যায়ক্রমিক মাইল ফলক হিসেবে উন্মেষিত হচ্ছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনধারায় ঘটেছে এ |   | | ||হ উন্নয়নকে আরও বেগবান করতে এবং জনমানুষের জীবনধারা উন্নততর করার লক্ষ্যে সরকার হাতে নিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেগা প্রকল্প।

 

বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ ফাস্ট ট্র্যাক/ মেগা প্রজেক্ট রয়েছে। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো হলোঃ

১. পদ্মা বহুমুখী সেতু

২. পদ্মা রেলসেতু সংযোগ।

৩. দোহাজারি রামু কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ।

৪. মেট্রোরেল।

৫. পায়রা সমুদ্রবন্দর।

৬. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

৭. মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

৮. রামপাল শালা বিদ্যুৎকেন্দ্র ।

৯. মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।

১০. এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল।

নিম্নে মেগা প্রজেক্টগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো:

১. পদ্মা বহুমুখী সেতু

বাংলাদেশের জনমানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায়। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। লাশের সবচেয়ে বড় নির্মাণাধীন অবকাঠামো পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল কাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে। বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ বহুল প্রত্যাশিত এ প্রকল্পটির সর্বশেষ নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে মোট ৩০,১৮৩ কোটি টাকা জুন মাসের ২৫ তারিখে প্রকল্পের সম্পূর্ণ অবকাঠামোর কাজ শেষ করে তা যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পদ্মা সেতুর অদ্যোপান্ত :

[table id=8 /]

পদ্মা সেতুর গুরুত্ব:

সেতুকে কেন্দ্র করে এপারে এবং ওপারে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

১. প্রতিবছর ১.৯% হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে।

২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১.২৩%।

৩. নির্মিত হওয়ার ৩১ বছরের মধ্যে জিডিপি ৬০০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৩২ সালের পর বাৎসরিক রিটার্ন ৩০০ মিস ডলারে দাঁড়াবে।

৪. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ মোট ২১টি জেলার সাথে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ শক্তিশালী। বা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। ফলে ঐ অঞ্চলের কৃষি, যোগাযোগ, শিল্পায়ন, নগরায়ন, জীবনমান বৃদ্ধি যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে।

৫. ১৫৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৯ হাজার হেক্টর জমি নদী ভাঙ্গন থেকে রেহাই পাবে। পাশাপাশি বন্যার কবল থেকেও রক্ষা কয়েক লক্ষ মানুষ।

৬. ৫০% ভর্তুকি দিয়ে চালু রাখা ফেরি সার্ভিস বন্ধ হবে এবং আদায়কৃত টোল সম্পূর্ণরূপে সরকার পাবে। ফলে প্রতিবছর সরকারে আয় বাড়বে প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ডলার।

৭. প্রায় ২ কোটির অধিক বেকারের কর্মসংস্থান ঘটবে আশা করা হচ্ছে।

২. মেট্রোরেল

রাজধানী বাসীর যানজটের ভোগান্তি দূর করতে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছে মেট্রোরেল প্রকল্প। এরই মধ্যে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

[table id=12 /]

মেট্রো রেলের গুরুত্ব :

  • নিরাপদ, দ্রুত, নাগালের মধ্যে আধুনিক নগর পরিবহন।
  • ২.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অবকাঠামো চালু।
  • যানজট ও দূষণ হ্রাস।
  • ঘন্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে।

রচনা : মেগা প্রজেক্ট

৩. পায়রা সমুদ্রবন্দর

পায়রা সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি সামুদ্রিক বন্দর। এটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। আগস্ট ১৩, ২০১৬ সালে সমুদ্র বন্দরটির गा শুরু হয়। এছাড়া এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে আরও কিছু প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যথা জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ করণ, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। পায়রা বন্দর দেশের রেল নেটওয়ার্কের সাথেও যুক্ত হবে বিধায় নদী খননের মধ্য দিয়ে বন্দরের নৌপথ ব্রহ্মপুত্র ও ভারতের আসামের কমিরগঞ্জ পর্যন্ত প্রসারিত হবে, যা বাংলাদেশ ও প্রতিবেশি দেশসমুহের জন্য সারি সুযোগ সৃষ্টি করবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার নৌপথের একটি পরিপূর্ণ সমুদ্রবন্দর চালু হবে। এই বন্দরটি মার পর ৮ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটসম্পন্ন মাতৃজাহাজসমূহ চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দ্রুত পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য করতে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরই দেশের ৯২% আমদানি – রপ্তানি সামলাচ্ছে। পায়রা বন্দর পদ্মা সেতুর জন্য আ মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।

[table id=13 /]

৪. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাশিয়া প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দিচ্ছে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

[table id=14 /]

৫. মাতারবাড়ী, মহেশখালী ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হল বাংলাদেশের একটি কয়লা ভিত্তিক প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হবে। ৬০০ মেগাওয়াটের মোট দুটি ইউনিট হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে (৬০০x২)=১২০০ মেগাওয়াট

[table id=15 /]

৬. রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট/ মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

ভারতের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নকারী রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পের অনুমোদিত বায় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।

[table id=16 /]

৭. মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর

মাতারবাড়ি বন্দর হল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের, কক্সবাজার জেলার, মাতারবাড়ি এলাকার প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর। বন্দর হিসাবে নির্মাণ করা হবে। এই বন্দরে অন্তত ১৫ মিটার গভীরতা বা ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে প্রবেশ করতে পারবে। প্রস্তাবিত কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা কয়লাবাহী জাহাজ ভেড়ানো জোটকে সম্প্রসারণ করে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক মাতারবাড়ি বন্দরের গভীরতা ১৬ মিটার হওয়ায় প্রতিটি জাহাজ ৮ হাজারের বেশি কন্টেইনার আনতে পারবে। বর্তমানে, ৯ মিটারের চেয়ে কম খসড়া গভীরতার জাহাজ দেশের দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং মোংলাতে প্রবেশ করতে পারে। মাতারবাড়ি বন্দর স্থাপনের কাজে প্রায় ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নৌ-চ্যানেল তৈরি করছে জাইকা। প্রধান ন্যাভিগেশনাল চ্যানেল ৩৫০ মিটার প্রশস্ত। সাথে বন্দরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে ১০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। ২০২৬ সালের নভেম্বর গভীর সমুদ্রবন্দরটির বহুমুখী টার্মিনাল। কন্টেইনার জাহাজের জন্য প্রস্তুত হবে এবং ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে একটি কয়লা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

[table id=17 /]

৮. পদ্মা রেলসেতু সংযোগ

পদ্মা রেলসেতুতে সংযোগের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। চীনের আমি সর্বস্বতার প্রবন্ধটি ব্যঞ্জনম্বিন করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

[table id=18 /]

৯. দোহাজারি রামু কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ

দোহাজারি থেকে রামু কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যাগাযোগ বাড়বে।

[table id=19 /]

রচনা : মেগা প্রজেক্ট

১০. এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল

ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্রা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজ) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটির কাজই শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সংগ্রহ করছে এই টার্মিনাল।

[table id=20 /]

বাস্তবায়নকালীন মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন বুনছে দেশের মানুষ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি (GDP) যেমন: অনেক হিসাব-নিকাশ এমনটি প্রত্যাশা সবার। কিন্তু সবগুলো প্রকল্পের বাস্তবায়ন সমান হারে হচ্ছে না। পদ্মা সেতু, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, ও মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো হলেও বাকিগুলো চলছে ধীরগতিতে। ফাস্ট ট্রাক হিসেবে এসব প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির এখন শিরে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে অবকাঠামো উন্নতি করতে হবে।


আরো দেখুন

রচনা : মহামারিতে নারীর প্রতি বৈষম্য
রচনা : অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
রচনা : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ
রচনা : চতুর্থ শিল্পবিপ্লব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top