স্বদেশপ্রেম / দেশপ্রেম / দেশাত্মবোধ
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম, মাগো, তোমায় ভালোবেসে ।
স্বদেশপ্রেম জন্মভূমির জন্যে মানুষের একধরনের অনুরাগময় ভাবাবেগ। স্বদেশপ্নেম বলতে বোঝায় নিজের জন্মভূমিকে ভালোবাসা। জন্মসূত্রে জন্মভূমির সঙ্গেই গড়ে ওঠে মানুষের নাড়ির যোগ ও স্বদেশের জন্যে তার মনে জন্ম নেয় নিবিড় ভালোবাসা। এই অনন্য ভালোবাসাই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার জন্মভূমিকে ভালোবাসে। জন্মস্থানের আলো, জল, হাওয়া, পশুপাখি, সবুজ প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মস্থানের প্রতিটি ধুলিকণা তার কাছে মনে হয় সোনার চেয়েও দামি। বিশাল অর্থে প্রত্যেক মানুষ এই পৃথিবীর সন্তান। সাধারণভাবে জন্মের পর বেড়ে উঠার স্থানই স্বদেশ।
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ:
জন্মভূমির মাটি, আলো-বাতাস, অন্ন-জলের’ প্রতি মানুষের মমত্ব অপরিসীম। জন্মভূমির ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রতি থাকে তার একধরনের আবেগময় অনুরাগ। জন্মভূমির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন। স্বদেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি এই অনুরাগ ও বন্ধনের নাম স্বদেশপ্রেম। মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার আবেগময় প্রকাশ ঘটে স্বদেশপ্রেমের মধ্যে। স্বদেশপ্রেম হচ্ছে নিজের দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, ভাষার প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করা। দেশের প্রতি প্রবল অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা এবং যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে। গর্ভধারিনী জননীকে যেমন সন্তান ভালোবাসে, তেমনি দেশ মাতৃকালেও মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে শেখে। দেশ ও দশের প্রতি মানুষের যে বন্ধন ও আকর্ষণ তা থেকেই স্বদেশপ্রেমের জন্ম। জননী, জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী ও মহিমায় দীপ্ত। স্বদেশপ্রেম মানুষের অন্তরে সদা বহমান থাকে। বিশেষ সময়ে, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তা আবেগ-উদ্বেল হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনামলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকান্তের দেশাত্মবোধক গানে-কবিতায় স্বদেশপ্রেমের আবেগময় প্রকাশ দেখা যায়। ১৯৩০-এ মাস্টারদা-র নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব-বিদ্রোহ স্বদেশপ্রেমেরই বলিষ্ঠ প্রকাশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ঘটেছে। স্বদেশপ্রেম দেশ ও জাতির অগ্রগতির লক্ষ্যে জ্বলন্ত প্রেরণা হিসেবে কাজ করে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে একপ্রাণ হয়ে মহৎ লক্ষ্য সাধনে ব্রতী করে।
স্বদেশপ্রেমের উৎস:
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে ভালোভাসে। আর নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। প্রতিটি জীবের মধ্যেই এই গুণ বিদ্যমান পশু বনভূমি ছেড়ে লোকালয়ে ছটফট করে। আবার পাখিকে নীড়চূত করলে তার মর্মভেদী আর্তনাদ বাতাস ভারি করে তোলে। এটি হয় নিজ আবাসের প্রতি ভালোবাসা থেকে। আর নিজ আবাসের প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা। স্বদেশের মাটি, বাতাস, পানির সাথে আমরা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ । তাই এগুলোর প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশপ্রেম।
স্বদেশপ্রেমের বৈশিষ্ট্য:
আশ্রস্থলের প্রতি আকর্ষণ জীবনের স্বভাবজাত ধর্ম। গরুর জন্য গোয়াল, বাঘের জন্য গুহা, পাখির জন্য নীড় প্রত্যেকের নিজস্ব আবাসস্থল আছে। মানুষের স্বদেশপ্রেম একটি বিশেষ আদর্শতাড়িত আন্তরিক প্রেরণা। অন্যান্য প্রাণীর ঐতিহ্যবোধ নেই, নেই সংস্কৃতি চেতনা-মানুষের এগুলো আছে । সেই সাথে আছে ইতিহাসের পাতা থেকে আহরিত জ্ঞান। তাই দেশের মাটির প্রতি মমত্ববোধের সাথে মিশে থাকে শ্রদ্ধা, প্রীতি ও গৌরববোধের আকাঙ্ক্ষা। কবির ভাষায়-
“স্বদেশের প্রেম যত সেই মাত্র অবগত
বিদেশেতে অধিবাস যার,
ভাব তুলি ধ্যানে ধলে, চিত্রপটে চিত্র করে
স্বদেশের সকল ব্যাপার।”
স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি:
স্বদেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ পায় স্বদেশের বিপর্যয়ের মুহুর্তে। দেশের দুর্দিনে দেশপ্রেমের পূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং জন্মভূমি জননীর মতো সন্তানের দিকে কাতর নয়নে তাকায়, আর জননীর বেদনায় সন্তানের হৃদয় হয় বিদীর্ণ। জলাশয় থেকে বিচ্ছিন্ন করলে মাছ যেমন জলের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে তেমনি প্রবাস জীবনে ও মানুষের ভেতর স্বদেশপ্রীতি মূর্ত হয়ে উঠে। তাইতো মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জন্মভূমির প্রতি মানুষের তীব্র আবেগ কাব্যে প্রকাশ করেছেন এভাবে-
“আমার দেশের ও মাটির গন্ধে
ভরে আছে এই মন,
শ্যামল কোমল পরশ ছাড়া
নেই কিছু প্রয়োজন।”
স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ:
একজন বক্তি ছোটবেলা থেকে স্বদেশের আলো-বাতাসের আঁচলে মাতৃতূল্য স্নেহে বড় হতে থাকে। স্বদেশের সঙ্গেই গড়ে উঠে তার নাড়ির সম্পর্ক। এ এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তার দেহ ও মনের সবকিছুই স্বদেশের দানে পরিপূর্ণ। বস্তুত মা, মাটি ও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিতকরণের মধ্যেই স্বদেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। দেশপ্রেম মূলত এভাবেই গড়ে ওঠে।
স্বদেশপ্রেমের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: আত্মত্যাগ, বীরত্ব, সরলতা, শর্তহীনতা, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, কর্তব্য ও একাত্মবোধ। কবি সমুদ্র গুপ্তের ভাষায়।
“স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে, সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব-প্রেমিক মানবতাবাদী।”
দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ:
স্বদেশের প্রতি প্রেম সর্বদাই উদার এবং খাঁটি। এর প্রেম আত্মপ্রেমকেও ছাড়িয়ে যায়। স্বদেশের প্রতি প্রেমের এই নিতান্ত সত্য দিকটি এডুইন আর্নলেন্ডের ভাষায় চমৎকার ফুটে উঠে-
“জীবনকে ভালোবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।”
প্রকৃত অর্থে স্বদেশপ্রেমী কখনও ছোট মনমানসিকতার অধিকারী হয় না। নিজ স্বদেশের কল্যাণ ও উন্নতি কি করে করা যায় তা-ই একজন প্রকৃত স্বদেশপ্রেমীর চিন্তার মূল বিষয়।
দেশপ্রেমের উগ্রতা:
দেশপ্রেম যেখানে মানুষের এক উন্নতবৃত্তি, সেখানে তা ত্যাগ তিতিক্ষার মহৎ বৈভবে উদ্ভাসিত, সেখানে তা গৌরবের বস্তু, অহংকারের বিষয়। কিন্তু দেশপ্রেম যেখানে অন্ধ ও উগ্র, সেখানে জাতির জীবনে তা বিপজ্জনক । সেখানে তা ডেকে আনে এক ভয়াবহ সর্বনাশা পরিণতি । উগ্র দেশপ্রেম দিকে দিকে শুধু স্বজাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। জার্মানির হিটলারের উগ্র দেশপ্রেমের কারণে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই চির অকল্যাণকর উগ্র দেশপ্রেমের মানসিকতা থেকে আমাদেরকে দূরে চলে আসতে হবে।
ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেমের শিক্ষা:
ছাত্ররাই দেশের ও জাতির ভবিষ্যত কর্মধার। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের আশ্রয়স্থল। তাই দেশ ও জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছাত্রজীবনেই জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসার জীবনমন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ করতে পারলেই দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
বাঙালির স্বদেশপ্রেম:
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য দেশপ্রেমিক জন্মেছেন। তাঁরা নিজ দেশের জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করে নিজ দেশ ও বিশ্বের কাছে অমর হয়েছেন। বাংলাদেশেও তার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের হাতে বাংলা ভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতের আত্মদান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের আত্মদান করেছেন অসংখ্য ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মা, বোন সহ সাধারণ মানুষ। এখনো দেশের লক্ষকোটি জনতা দেশের সামান্য ক্ষতির আশঙ্কায় বজ্র কণ্ঠে গর্জে উঠে। তাইতো বলা হয়-
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”
স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ:
স্বদেশপ্রেম আল্লাহ প্রেমেরই নামান্তর। আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, তাঁকে ভালোবাসাই হচ্ছে ঈমান। তাই মুহম্মদ (স) বলেছেন-
‘স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’।
যে ব্যক্তি দেশকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না, দেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় না, দেশবাসীর দুঃখ বেদনা অনুভব করে না, সে ব্যক্তি খাঁটি আল্লাহ-ভক্ত হতে পারে না। মূলত দেশপ্রেমের মাধ্যমে ইমান সবসময় তরতাজা থাকে।
স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত:
যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেরদের জীবন উৎসর্গ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এ উপমহাদেশে বঙ্গবন্ধু শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তিতুমীর, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাস বসু প্রমুখ ব্যক্তি নিজেদের জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাছাড়া রাশিয়ার লেনিন ও স্টালিন, ইতালির গেরিবল্ডি, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, চীনের মাও সেতুং প্রমুখ ব্যক্তিগণ সারা বিশ্বে স্বদেশপ্রেমের ক্ষেত্রে একেকটি নক্ষত্র। আর বাঙালি জাতির দেশপ্রেমও বিস্মিত করেছে সবাইকে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ সন্তানের জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।
স্বদেশপ্রেমের বিকাশ:
মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি স্বদেশপ্রেমের বিকাশ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একেকটি স্বতন্ত্র পর্যায়। এ সফলতার সাথে অতিক্রমের মাধ্যমে একজন মানুষ তার স্বদেশপ্রেমের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। দশ মাস দশ দিন ধরে কষ্টের তিক্ততায় করেছে লালন করেছেন মা। মায়ের সাথে আমাদের রয়েছে নাড়ীর বন্ধন যা কোনোভাবেই ছিন্ন হওয়ার নয়। যে ভাষাতে প্রথম কোলে ডাকিনু মা মা বলে সে ভাষাই আমাদের মাতৃভাষা। আর মাতৃভূমি হচ্ছে পৃথিবীর নির্দিষ্ট যে ভূখণ্ডে মানুষ জন্মগ্রহণ করে। তাইতো স্বদেশ বন্দনায় বাণী ঝরে পড়ে-
“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।”
দেশপ্রেমের উপায়:
“স্বদেশের উপকারে নাই যার মন/কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।”
পবিত্র ইসলাম ধর্মে ঘোষিত হয়েছে ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’ । পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই যেখানে দেশকে ভালোবাসার নির্দেশ দেয়া হয় নি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মানুষ জীবনে যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে । স্বীয় দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম নিহিত। দেশের কল্যাণে ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে, বিশ্বসভ্যতায় অবদান রেখে দেশের গৌরব বাড়ানো যায়। বস্তুত নিজের দৈন্যদশাকে তুচ্ছ করতে হবে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।
বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম:
বর্তমানের এই আধুনিক সমাজে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা দিন দিন লোপ পাচ্ছে। মানুষ দিন দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং নিজের স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ছে। দেশ ও দেশের মানুষের কথা না ভেবে দেশের ক্ষতি করে নিজেদের উদরপূর্তি করছে। তারা দেশপ্রেমের চেতনাকে ভুলে গিয়ে নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখছে। এই ধরনের মানসিকতার কারণে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে আর গরিবেরা দিন দিন আরও গরিব হচ্ছে। তাই এই ধরণের মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে দেশের ও দশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় স্বদেশপ্রেমের অমর বাণী উচ্চারিত হয়েছে বারবার। তাদের দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমে রূপ নিয়েছে। দেশপ্রেমিক না হলে বিশ্বপ্রেমিক হওয়া যায় না। স্বামী বিবেকানন্দ দেশকে ভালোবেসেছিলেন বলেই বিশ্বপ্রেমের অমর বাণী প্রচার করেছেন। দেশকে ভালোবাসা মানে দেশের মানুষকে ভালোবাসা। দেশের মানুষকে ভালোবাসলে পৃথিবীর সকল মানুষকে ভালোবাসা যায়। মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, রেডক্রসের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ডুনান্ট প্রমুখ বিশ্ব মানবসেবীদের নামও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
স্বদেশপ্রেমের বিকৃত রূপ :
স্বদেশপ্রেম পবিত্র। তা দেশ ও জাতির জন্যে গৌরবের ও কিন্তু উগ্র ও অন্ধ স্বদেশপ্রেম কল্যাণের পরিবর্তে রচনা করে ধ্বংসের পথ । জন্ম স্বদেশপ্রেম উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়। তা জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ও জার্মানিতে হিটলার ও ইতালিতে মুসোলিনি উগ্র জাতীয়তা ও অন্ধ দেশপ্রেমের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। তার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লাখ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটেছিল ও বিপন্ন হয়েছিল বিশ্বমানবতা।
পৃথিবীতে বীর, বিপ্লবী, ত্যাগী মহৎ দেশপ্রেমিক মানুষেরা তাদের বীরত্ব ও ত্যাগের মহান আদর্শ রেখে গেছেন। স্বদেশপ্রেমের শক্তিতেই তারা পৃথিবীকে করতে চেয়েছেন সুন্দর, কল্যাণকর ও শান্তিময়। মূলত দেশপ্রেম মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ এবং অমূল্য সম্পদ । একটি মহৎগুণ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশপ্রেমের মূল লক্ষ্য মানুষকে ভালোবাসা । তাই দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই অংশ বিশেষ। ব্যক্তিস্বার্থকে ত্যাগ করে সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে ভালোবাসাই দেশপ্রেম। আর দেশের উর্ধ্বে সমগ্র পৃথিবীকে ভালোবাসাই বিশ্বপ্রেম। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার চরণ দুটি প্রণিধানযোগ্য-
ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা ।